আগুনমুখার মেয়ে (হার্ডকভার)
আগুনমুখার মেয়ে (হার্ডকভার)
৳ ৫০০   ৳ ৪২৫
১৫% ছাড়
এই বইটি আর প্রকাশিত বা ছাপা হবে না বলে প্রকাশনী থেকে আমাদের জানানো হয়েছে।

তথ্য সাময়িকী সালতামামি – ২০২৩  অর্ডার করলে সাথে সালতামামি ২০২২ ফ্রি

১১৯৯ বা তার বেশি টাকার বই অর্ডারে ডেলিভারি চার্জ ফ্রি। কুপন: FREEDELIVERY

১২ মাসের তথ্য সাময়িকী (জানুয়ারী – ডিসেম্বর, ২০২৩)  এখন ৬০% ছাড়ে

Home Delivery
Across The Country
Cash on Delivery
After Receive
Fast Delivery
Any Where
Happy Return
Quality Ensured
Call Center
We Are Here

ছোটবেলা থেকে আগুনমুখার নাম শুনেছি সকলের মুখে মুখে। একটা ভীতির শিহরণ জাগাতো শরীরে-মনে এই নামটি শোনার সঙ্গে সঙ্গে। আসলে আগুনমুখার সঙ্গে মিলেছে আরো ছ’টি নদী। আগুনমুখা, তেঁতুলিয়া,লোহালিয়া,বুড়া গৌরাঙ্গ,বাবনাবাদ,দারচিড়া ও ডিগ্রি নদী। ডিগ্রি নদীকে এক সময় খাল বলা হতো। পলাচিপা বন্দরের দক্ষিণদিকে বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষে কতগুলো চর বা দ্বীপ প্রাকৃতিক ভাঙ্গাগড়ার নিয়মেই গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে বড় বাইশদিয়া,ছোট বাইশদিয়া বা রাঙ্গাবালি,চর কাজল, চর মন্তাস,চর বিশ্বাস ,চর কুকরিমুকরি,চর কলাগাছিয়া,আন্ডারচর ,সোনার চর এবং আরো অনেক চর জেগে উঠেছে। প্রায় দুশো বছর আগে এখানে উঁচু চরে, যেমন- বড় বাইশদিয়া ,ছোট বাইশাদিয়ায় বার্মা-আরাকান থেকে আগত জলদস্যুরা প্রথম বসতি স্থাপন করে। মাটির উর্বরতা,সুন্দরবনের ঘন বন ও প্রচুর মৎস সম্পদের লোভে তাদের এই আগমণ ও বসতি স্থাপন। পরে ধীরে ধীরে বা্ঙালিরাও এই অঞ্চলে বসতি গড়ে তোলে। তারা বর্মীদের সঙ্গে মিলেমিশে বাস করতো।
আগুনমুখার ভয়ার মূর্তি ছিল কিংবদন্তীর মতো।গলাচিপা ,খেপুপাড়া,আমতলী,চরকাজল এবং আগুনমুখার চারপাশের এলাকার মানুষকে এ আগুনমুখা পাড়ি দিয়েই ব্যবসা-বানিজ্য ও অন্যসব প্রয়োজনীয় কাজকর্ম করতে হতো। চরগুলোতে কিছুদিন আগেও সভ্যতার অথবা জীবনযাপনের জন্য প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ,ঔষুধপত্র,ডাক্তার,হাসপাতাল বা শিক্ষার কোনো ব্যবস্থাও ছিল না। বাধ্য হয়েই এই এলাকার লোকজন নিত্যদিন ভয়াবহ আগুনমুখা পাড়ি দিতে হতো। আগুনমুখা সাত নদীর মোহনা বা সঙ্গম স্থান। তাই চারদিক কেবল থেকে উত্তাল জলরাশি চোখে পড়তো। প্রবল ঢেউয়ের ওপর প্রতিফলিত সূর্যরশ্ণি জ্বলন্ত আগুনের লেলিহান শিখাকে মনে করিয়ে দিতো। এ জন্যই সম্ভবত এর নাম আগুনমুখা। এপার ওপার করার সময় চারদিকে কিছুই চোখে পড়তো না। শুধু জলরাশি আর জলরাশি। আমার মা, খালা, দাদি এবং গ্রামবাসীর কাছে শুনেছি, এই অঞ্চলের মেয়েরা শাশুড়ি,ননদ এবং স্বামীর অত্যাচার থেকে বাঁচার জন্য এই আগুনমুখায় ঝাঁপিয়ে পড়ে মুক্তি পেত। প্রেমিক-প্রেমিকারও বাড়ি তথা সমাজে স্বীকৃতি না পেলে আগুনমুখার কোলেই যুগল আশ্রয় নিত। বড় নৌকায় আগুন মুখা পাড়ি দেওয়ার সময় কত মানুষ যে প্রাণ হারিয়েছে,তা হিসাকব কেউ কখনো রাখে নি।
আমার পূর্বপুরুষ অর্থ্যাৎ দাদার বাবা চাঁদে আলি সর্দার বড় বাইশদিয়ার কাঁটাখলী গ্রামে বসতি স্থাপন করেছিলেন । আমাদের আর একটি বাড়ী আছে গলাচিপার কাছে লোন্দা গ্রামে। বিয়ে-শাদি এবং নান পরব উপলক্ষে আমাদের প্রায়ই আগুনমাখা পাড়ি দিতে হতো। বড় নৌকা করে আমাদের কাঁটাখালীর বাড়ি থেকে লোন্দার বাড়ি যেতে প্রায় ১২-১৩ ঘন্টা লাগতো।নির্ভর করতে হতো বাতাসের গতির ও জোয়ার-ভাটার ওপর।এখন অবশ্য আগুনমুখার চেহারা অনেক বদলে গেছে । কারণ প্রতিনিয়ত পুরনো চর ভাঙছে এবং নতুন চর জেগে উঠেছে। প্রকৃতির এই নির্মম খেলার যারা সাক্ষী তারাই শুধু জানেন আগুনমুখা তাদের জীবনে কী দিয়েছে এবং কী নিয়েছে। এখন লঞ্চে করে আমাদের বাড়ি কাঁটাখালী থেকে গলাচিপায় আসতে-যেতে সময় লাগে চার ঘন্টা ।ওই অঞ্চলে স্কুল হয়েছে। কিন্তু বিদ্যুৎ,স্বাস্থ্য ক্লিনিক,হাসপাতাল বা সাধারণ মানুষের উপযুক্ত কোনো বাসস্থানের ব্যবস্থা হয়নি। ঝড়,বন্যা,সাইক্লোলনে মানুষ এখনো প্রকৃতির দয়ার ওপর নির্ভরশীল। প্রসূতি ও শিশুমৃত্যুর হার ওখানে সবচেয়ে বেশি। পরিবার পরিকল্পনার কোনো ব্যবস্থা নেই। বিদেশি উন্নয়ন সংস্থাগুলোকেও ওই অঞ্চল সম্পর্কে কোনো ধারনাই দেয়া হয়নি।<br>আমার জীবনে আগুনমুখার প্রভাব অন্তহীন। এই অঞ্চলের সমগ্র জনগোষ্ঠী আমার আত্নার আত্নীয়। এদের সুখ-দু:খের কাহিনী আমার জীবনেরসুখ-দু:খের কথা। তাই আমার জীবনকাহিনৗ আগুনমুখার মেয়েরই কাহিনী।
---নূরজাহান বোস

Title : আগুনমুখার মেয়ে
Author : নুরজাহান বোস
Publisher : সাহিত্য প্রকাশ
ISBN : 9847012400487
Edition : 2011
Number of Pages : 312
Country : Bangladesh
Language : Bengali

If you found any incorrect information please report us


Reviews and Ratings
How to write a good review


[1]
[2]
[3]
[4]
[5]